শাহরাস্তিতে সরকারি খাল গিলে খাচ্ছে ড্রেজার মাফিয়া, প্রশাসন দেখেও চুপ

 

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকায় চার বছর ধরে সরকারি খাল ও তার পাড় কেটে অবৈধভাবে মাটি তুলছে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন ভোরের আগে থেকেই ড্রেজারের গর্জন শোনা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ খালের দুই পাশের সবুজ ফসলি জমি ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে, পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

অভিযোগপত্রে বাদী মো. আমির হোসেন উল্লেখ করেন, বিবাদী মো. রাশেদুল ইসলাম সরকারি খালের লাগোয়া একটি জমি কিনে সেখানে ‘আধার’ তৈরি করে ড্রেজার বসান। সেখান থেকে খাল ও পাড়ের মাটি কেটে ট্রাকে বিক্রি করা হয়। কাজগুলো বেশিরভাগ সময় রাতের আঁধারে হয়, যাতে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে যাওয়া যায়।

স্থানীয় কৃষক আবদুল মালেক বলেন, “আগে খালের পানি বর্ষায় জমি সেচের কাজে লাগত। এখন খাল গভীর হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় অতিরিক্ত পানি এসে জমি ডুবে যায়, শুকনো মৌসুমে আবার পানিশূন্য হয়ে পড়ে। দুই মৌসুমেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা হলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, “তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয়দের দাবি, তদন্তের কথা শুধু সময়ক্ষেপণের অজুহাত, আর এ সময়ের মধ্যেই ড্রেজারের পাইপ ও ট্রাক অব্যাহতভাবে চলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ মাটি ব্যবসায় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ রয়েছে। প্রতি ট্রাক মাটি বিক্রি হয় ১,৮০০ থেকে ২,৫০০ টাকায়। দিনে ২০–২৫ ট্রাক মাটি ওঠে, যা মাসে কয়েক লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্যে রূপ নেয়। এর একটি টাকাও সরকারি রাজস্বে জমা হয় না।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, “খাল ও নদীর তলদেশে এভাবে হস্তক্ষেপ করলে বর্ষায় অস্বাভাবিক বন্যা, শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরতা হারাবে, জীববৈচিত্র্যও বিলীন হবে।”

অবৈধ ড্রেজার জব্দ, খাল পুনঃখনন ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির ক্ষতিপূরণ এই তিন দফা দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি না মানলে তারা নিজেরাই ড্রেজার অপসারণে নামবেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রাজ্জাকের প্রত্যক্ষ মদদেই এসব অবৈধ কাজ প্রকাশ্য গোপনের মতো তার ইউনিয়নে চলছে।