শাহরাস্তিতে সিজারে গৃহবধূর মৃত্যু: ডা. তানজিনার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

 

শাহারাস্তি জেনারেল হসপিটাল

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে এক গৃহবধূর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে ঘটেছে ব্যাপক ভাঙচুর। মৃত গৃহবধূ মোছা. রিপা (৩০) ছিলেন চার সন্তানের জননী।

পরিবারের দাবি, সিজারিয়ান অপারেশনের সময় দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডা. তানজিনা অপেশাদারভাবে অপারেশন করেন, যার ফলে প্রস্রাবনালী ও জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে পরবর্তীতে মারাত্মক স্বাস্থ্যজটিলতায় ভুগে রিপা ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

২৬ জুন রিপার সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে। এরপর ৩০ জুন তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই রিপার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরিবার তাঁকে আবারও শাহরাস্তি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে না দেখেই কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। শেষমেশ ১ আগস্ট ভোরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নিজমেহারসহ আশপাশের এলাকার শতাধিক মানুষ হাসপাতালে এসে জড়ো হন। উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের জানালার কাঁচ, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন।

নিহতের মা বলেন, চারটা ছোট পোলাপান রেখে মেয়ে আমার চলে গেল। ডাক্তার ভুল অপারেশন করছে, কিচ্ছু করার সুযোগ পাই নাই। ওরা ডাক্তার না, কসাই। এই আবেগঘন মন্তব্যে উপস্থিত অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডা. তানজিনার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অপারেশনজনিত গাফিলতি, অহেতুক সিজার এবং রোগীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য প্রশাসন এতদিন তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, পরিবারকে সমঝোতায় আনার চেষ্টা চলছে। তবে চিকিৎসায় ভুল হয়েছিল কি না, তা নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি।

শাহরাস্তি থানার ওসি মো. আবুল বাসার জানান, “এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছি এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি।”

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারা অনুযায়ী, কারও অবহেলা বা অসতর্কতার কারণে কারও মৃত্যু ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এছাড়া ১৯৮৯ সালের “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন” অনুযায়ী ভুল চিকিৎসা, প্রতারণা বা অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা যায়।

এলাকাবাসীর জোর দাবি, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু চিকিৎসকের লাইসেন্স স্থগিত নয়, প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।